ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২১/০৯/২০২৫ ৮:৫৪ এএম

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের শীলখালী বনাঞ্চলে চলছে গাছ নিধন কর্মযজ্ঞ। বাতিল হওয়া হেডম্যান টাকা কামাই করে আনছেন বলেই তার কথাই বনের জায়গা বিক্রি করে চলছেন রেঞ্জকর্মকর্তা। এক শ্রেণীর বনখেকোর দখলে রয়েছে শিলখালী রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এতে নির্বিচারে গাছ নিধন ও বনভূমি দখল চলছে।

জানা যায়, শিলখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালামকে টাকা দিয়ে মাদারট্রি (বড় গর্জন গাছ) কেটে নিয়ে যাচ্ছে বনখেকোরা। রেঞ্জ অফিসার আবুল কালামের চাহিদামত টাকা দিলে তিনি ফিরেও তাকান না বনের প্রতি। বনে রামরাজত্ব চলে হেডম্যান ও বলির। তারা দিনরাত অত্যাচার চালায় বনের। কেটে নিয়ে যায় বড় বড় গাছ। বিক্রি করে দেয় বনের জায়গা। ক্রেতাদের পরিমাপ করে দেয় বলি ও কথিত হেডম্যান। অফিসে ফিরে তারা উভয় যা রিপোর্ট দেবে-তাই বিশ্বাস করেন রেঞ্জ কর্মকর্তা। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, হেডম্যান ও ভিলেজার প্রথা বহু আগেই বাতিল করে দিয়েছে সরকার। বনরক্ষার্থে বর্তমানে বিট কর্মকর্তার নেতৃত্বে বনপ্রহরীরাই বনাঞ্চল পাহারা দিয়ে থাকে। তবে টেকনাফের শিলখালী বনাঞ্চলে চলছে তার উল্টো। হেডম্যান আবু রেঞ্জারের জন্য টাকা কামাই করে নিয়ে আসেন বলে তিনি তার উপর বিশ্বাস করে থাকেন সর্বদা। কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের শিলখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম হেডম্যান আবুকে দিয়ে উর্ধতন এক বন কর্মকর্তার নামে লাখ লাখ টাকা মাসোহারা উত্তোলন করাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রেঞ্জ কর্মকর্তার তদারকিতে হেডম্যানদের দিয়ে ভিলেজার, বনভূমিতে বসবাসকারী, ফার্নিচার দোকানি, বোট মালিক, পাহাড় দখলদার থেকে এসব চাঁদা উত্তোলন করে থাকে প্রতিনিয়ত। শিলখালী রেঞ্জে প্রায়ই শত বছর আগে থেকে মানুষ বনের জমিতে বসবাস করে আসছে। তাদের ঘরবাড়ী মেরামত করলে রেঞ্জ কর্মকর্তাকে দিতে হয় মোটা অংকের টাকা। হাজমপাড়া পাহাড়ে হেল্প প্রজেক্টের বনায়ন না করে পাহাড় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে রেঞ্জার কালামের বির“দ্ধে।
স্থানীয়দের অভিযোগ মতে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, সুফল বনায়নে হরিলুট করে সরকারের বিপুল টাকা পকেটভারি করেছে আবুল কালাম। এছাড়াও বনভুমি বিক্রি ও পাহাড় কেটে পাকা দালান নির্মাণে সহযোগীতা করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হয়েছেন খোদ রেঞ্জ কর্মকর্তা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি বৃক্ষ নিধন হচ্ছে শিলখালী রেঞ্জের জাহাজপুরা, মাথাভাঙা, কচ্ছপিয়া, মারিছবনিয়া, নোয়াখালী পাড়ার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে। রেঞ্জের আওতাধীন এলাকাগুলোতে নির্বিচারে পাহাড় কাটা, বনভুমি বিক্রি ও মূল্যবান গাছ কেটে পাচারের ঘটনা রীতিমতো পরিবেশবাদী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাবিয়ে তুলেছে।

এদিকে, রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালামের যোগসাজশে দিন-রাত গাছ কাটা এবং কাঠ পাচার অব্যাহত থাকলেও রহস্যজনক নিরবতা পালন করছে উর্ধতন কর্মকর্তা। রীতিমত বন কর্মকর্তার নিরব ভুমিকার কারণে কাঠ চোরেরা আস্কারা পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে গাছ নিধনে মেতে উঠেছে। শিলখালী রেঞ্জে সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। এই রেঞ্জে শতবর্ষীয় মাদার ট্রি গর্জন, সেগুন, করই, গামারী, জার“ল, জাম, মেহগনী, তেলসুর ও সিভিটসহ বিভিন্ন প্রজাতির মুল্যবান গাছ দৈনন্দিন নি:শেষ হয়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় কাঠ চোরাকারবারিরা দিনে-রাতে প্রতিযোগিতামুলক ভাবে মূল্যবান গাছ নিধন চালালেও রেঞ্জ কর্মকর্তা রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ রয়েছেন বলে জানান সচেতন মহল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শিলখালী রেঞ্জের বনাঞ্চল থেকে নির্বিচারে নিধন করা মুল্যবান গাছগুলো ডাম্পার (মিনি ট্রাক) যোগে সরবরাহ করে যাচ্ছে সিন্ডিকেট সদস্যরা। এতে করে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মূল্যবান বৃক্ষ দিনদিন শুন্য হয়ে ন্যাড়া ভুমিতে পরিণত হচ্ছে। চোরাই কাঠ সরবরাহকারীচক্র বনের মূল্যবান গাছ কেটে অন্যত্র সরবরাহ করে দিচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করলেও কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের শিলখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম এ ব্যাপারে কোন ধরণের ভুমিকা বা পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। বনের গাছ চুরি অব্যাহত থাকায় সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থায়নে ‘সাসটেইনেবল ফরেস্ট অ্যান্ড লাইভলিহুড (সুফল) প্রজেক্টথ এর আওতায় সরকারের গৃহিত নতুন বনায়ন কর্মসুচী এই শিলখালী রেঞ্জে ভেস্তে যেতে বসেছে। খোদ শিলখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালামের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে সুফল প্রকল্পের অধীনে টেকসই বনায়ন বিকল্প জীবিকায়ন প্রকল্পের সৃজিত বনায়ন বিফলে চলে গেছে। সুফল বনায়নে আগাছা পরিস্কারের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। অযত্ন-অবহেলায় সুফল বনায়নের বেশির ভাগ বিভিন্ন প্রজাতির স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী চারা গাছ মারা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বনাঞ্চলের মুল্যবান গাছ কেটে পাচার সহজতর এবং দ্রুত অন্যত্র সরবরাহের জন্য সংরক্ষিত বনের ভেতর গাছ ও পাহাড় কাটছে কাঠ চোর ও বনভূমি দখলদাররা। শিলখালী, জাহাজপুরা, মাথাভাঙা, কচ্ছপিয়া, নোয়াখালীপাড়া কাঠ চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের সঙ্গে গোপন বৈঠকের মাধ্যমে কাঠ ও পাহাড়ি পাথর সরবরাহ করে পকেট ভারি করছে রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম। নির্বিঘ্নে ডাম্পার যোগে দিনে ও রাতে কাঠ সরবরাহ করা হচ্ছে বনের মূল্যবান কাঠ। অবৈধ দখলদারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে দালান নির্মাণে সহযোগীতাও করেছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা। ওই এলাকায় এধরনে প্রতিটি অবৈধ কাঁচা পাকা দালান থেকে তিনি লাখ লাখ টাকা অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বনজায়গীরদার (ভিলেজার) জানান, চকিদারপাড়া, শিলখালী, জাহাজপরা, মাথাভাঙা, মারিছবনিয়া, কচ্ছপিয়া, নোয়াখালীপাড়া সহ বিভিন্ন পয়েন্টে দিনে ও রাতে সেগুন, গর্জন ও সিভিট গাছ কাটা যাচ্ছে। আরও অভিযোগ, নিধন হওয়া চোরাই কাঠ ভর্তি গাড়িগুলো শিলখালী রেঞ্জ অফিসের সামনের সড়ক দিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। এমনকি মূল্যবান গাছ ছাড়াও বনাঞ্চল থেকে লাকড়ি যাচ্ছে টেকনাফ এলাকার বিভিন্ন ইট ভাটায়। তারা আরও জানান, শিলখালী রেঞ্জে প্রতিনিয়ত গাছ নিধন করেছে কাঠ চোরেদলা। তাদের দাবী সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন বন কর্মকর্তারা এসব এলাকা পরিদর্শন করলে শতশত সদ্যকাটা গাছের মুথা পাওয়া যাবে। রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম মাঝে মধ্যে টহলে গিয়ে গাছ নিধন দৃশ্য দেখেও এড়িয়ে যান।

কারণ হিসেবে তারা বলেন, প্রতিটি নিধন হওয়া গাছের টাকা পান রেঞ্জ কর্মকর্তা। অথচ উক্ত বনাঞ্চলে এসব গাছ বড় করতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গাছ বড় করতে লেগেছে দীর্ঘ সময়। অথচ বনের রক্ষক রেঞ্জ কর্মকর্তা কাঠ চোরদের সঙ্গে অঁাতাত করে এসব গাছ অতিঅল্প সময়ে মোটা টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছে। কাঠ চোরকারবারিদের সঙ্গে তার রয়েছে দহরম মহরম সম্পর্ক। ফলে রেঞ্জ কর্মকর্তরা যোগসাজসে নিয়ে যাচ্ছে বনের মূল্যবান কাঠ। কাছকাটা, বনের জায়গা বিক্রি ও টাকা নেওয়ার কথা সত্য নয় দাবী করে এব্যাপারে শিলখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, এক শ্রেণীর বনখেকো বনজসম্পদ ভোগ করতে না পেরে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনছে। সুত্র: জনকণ্ঠ

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে পাচারকালে বিপুল খাদ্যসামগ্রী জব্দ, আটক ১০

কক্সবাজারের টেকনাফে সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপ এলাকায় কোস্ট গার্ড অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ খাদ্যসামগ্রীসহ ১০ পাচারকারীকে আটক ...

কক্সবাজারে বিয়ের অনুষ্ঠানে কথা-কাটাকাটি, বিএনপি নেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

কক্সবাজারের টেকনাফে বিয়ের অনুষ্ঠানে বাগবিতণ্ডার পরে ছুরিকাঘাতে ইমদাদ হোসেন (৪৭) নামের এক বিএনপির নেতাকে হত্যার ...